প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস

বাবু লক্ষ্মীকান্ত দাশ চৌধুরী অত্র এলাকার জমিদার ছিলেন যার আদি পুরুষ দেওয়ান নিধিরাম। তাঁর ছিল দুই ছেলে। বাবু রাজকুমার দাস চৌধুরী এবং বাবু তারাকান্ত দাস চৌধুরী। বাবু রাজকুমার দাস চৌধুরীর চার ছেলের মধ্যে বড় ছেলের নাম বাবু জ্ঞানেন্দ্র দাস চৌধুরী। তিনি ছিলেন তৎকালীন সময়ের একজন শিক্ষিত মার্জিত এবং শিক্ষানুরাগী। বি. পাশ এই শিক্ষানুরাগীই ছিলেন অত্র বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক। বাকীরা হলেন বাবু কামিনী দাস চৌধুরী, বাবু ভূপতি দাস চৌধুরী এবং বাবু দক্ষিনা দাস চৌধুরী। আর বাবু তারাকান্ত দাস চৌধুরীর ছিল ছেলে। তাঁরা হলেন বাবু কুমুদ দাস চৌধুরী, বাবু অতুল দাস চৌধুরী, বাবু যোগেন্দ্র দাস চৌধুরী, বাবু ইন্দু দাস চৌধুরী এবং বাবু সরোজ দাস চৌধুরী। বাবু যোগেন্দ্র দাস চৌধুরীর ছেলে শ্রীরঞ্জিৎ কুমার দাস গুপ্ত (কুট্টি বাবু)।তিনিই একমাত্র জমিদার বংশধর হিসাবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে অবস্থান করেন এবং এখানেই শেষ ণিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

১৮ শতকের শেষের দিকে জমিদার পরিবার বুঝতে পারেন যে, অদূর ভবিষ্যতে জমিদারি প্রথা থাকবে না। তখন হয়ত কালের গর্ভে আমাদের কথা সবাই ভূলে যাবে। এমন কি করা যায় যার জন্য আমাদের কথা, আমাদের জমিদার পরিবারের কথা কাল কাল ধরে সাবাই মনে রাখবে।অবশেষে বাবু জ্ঞানেন্দ্র দাস বাবু সিদ্ধান্ত নিলেন এখানে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করবেন। যার মাধ্যমে আজীবন মানুষ এই বিদ্যালয়ের কারনে তাঁদের কথা মনে রাখবে। যার ফলে স্থাপিত হয় কলমা লক্ষ্মীকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়।

বাবু জ্ঞানেন্দ্র দাস বাবু জমিদার পরিবারে এই বিদ্যালয় নির্মানের কথাটি উপস্থাপন করলে বাবু তারাকান্ত দাস চৌধুরী বিদ্যালয় নির্মানের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন বিদ্যালয় নির্মান করলে আমাদের প্রজারা শিক্ষিত হয়ে আমাদের সাথে একই চেয়ারে বসবে। আমাদের সম্মান করবে না। তখন বাবু জ্ঞানেন্দ্র দাস চৌধুরী বলেন যে, প্রজারা শিক্ষিত হলেই বরং আমাদের সম্মান করবে। ফলে বিদ্যালয় নির্মান করা খুবই জরুরী। বাবু জ্ঞানেন্দ্র দাস চৌধুরী বিদ্যালয়ের নির্মানের চেষ্টা করলে তারাকান্ত দাস চৌধুরী বলেন তাহলে জমিদারী ভাগ করে দাও। এতে করে জমিদারি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। বিদ্যালয়কে কেন্দ্রকরে ভাগ হয়ে যাওয়া সম্পত্তির মধ্যে বাবু জ্ঞানেন্দ্র দাস চৌধুরী গংদের অংশে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। আজও তাদের বাসভবনটি মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে। যা রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে ঝড়ার্জীণ অবস্থায় আছে। যথাযত ভাবে এটিকে মেরামত করতে পারলে এটিই হতে পারত একটি প্রাচীন দর্শনীয় স্থান।

প্রতিষ্ঠাতা বাবু জ্ঞানেন্দ্র দাস চৌধুরীর তিন ভাই চাচা তারাকান্ত দাস চৌধুরীর বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অনীহার কারনে নিজেদের পিতৃদেব বাবু রাজকুমার দাস চৌধুরীর নামে বিদ্যালয়ের নাম করন করতে চাইলেন। কিন্তু বিজ্ঞ, উদার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন জ্ঞানবাবু অনুজদের বঝিয়ে এবং ভবিষ্যতে ছোট হিস্যার সাহায্য সহযোগিতা পাবার যুক্তি দেখিয়ে পিতামহ শ্রী লক্ষ্মীকান্ত দাস চৌধুরীর নামানুসারেই বিদ্যালয়ের নাম দেন কলমা লক্ষ্মীকান্ত উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় গ্রাম-কলমা, জেলা- ঢাকা। প্রতিষ্ঠাতা- জমিদার শ্রী লক্ষ্মীকান্ত দাস চৌধুরীর পৌত্রগন। পরবর্তীতে নাম হয় কলমা লক্ষ্মীকান্ত বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় এখন যার নাম কলমা লক্ষ্মীকান্ত হাইস্কুল এন্ড কলেজ

১৯০০ সালের ১৯ শে এপ্রিল থেকে বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু করে। একই সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদণের জন্য কাগজ পত্র প্রেরণ করা হয়। ১৯০১ সোলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয়। যে কারনে বিদ্যালয়ের স্থাপিত কাল ১৯০১ সালের ১৯ শে এপ্রিল ধরা হয়। আজও ১৯ শে এপ্রিল বিদ্যালয়ের জন্ম বার্ষিকী পালন করা হয়।


কলমা লক্ষ্মীকান্ত হাইস্কুল এন্ড কলেজ মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা স্থানীয়ভাবে ও জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত নাম। এর EIIN নম্বর 111115। এই বিদ্যালয়টি শিক্ষার মান, শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা বজায় রেখে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সুসংগঠিতভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শুরু থেকেই এই প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে, যা একে একটি নির্ভরযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।

বিদ্যালয়টিতে রয়েছে দক্ষ, প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ শিক্ষকবৃন্দের একটি প্রাণবন্ত টিম, যারা পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। এখানে শুধু পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক শিক্ষা নয়, বরং সহশিক্ষা কার্যক্রম যেমন—বিতর্ক, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্কাউটিং, বিজ্ঞান মেলা, রচনা প্রতিযোগিতা ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মননশীলতা ও নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশের সুযোগ দেওয়া হয়।

বিদ্যালয়ের পরিবেশ শিক্ষাবান্ধব, মনোরম এবং শৃঙ্খলাপূর্ণ, যেখানে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে ও আগ্রহ নিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সর্বদা চেষ্টা করে যাচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি ও ডিজিটাল শিক্ষার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাঠদান পদ্ধতি আরও উন্নত ও যুগোপযোগী করার জন্য। ক্লাসরুমে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে পাঠদান, ডিজিটাল কনটেন্ট এবং অনলাইন শিক্ষার সুবিধা—এইসবই বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে রাখছে।

আমাদের বিশ্বাস, একজন শিক্ষার্থীর সঠিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন শুধু বইয়ের জ্ঞান নয়, বরং নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ, নেতৃত্ব, এবং মানবিক মূল্যবোধ। তাই লোহাজং মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সেই দিকগুলিতেও গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করছে ভবিষ্যতের আলোকিত মানুষ, যারা আগামী দিনে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে দৃঢ় ভূমিকা রাখতে পারবে।

আমরা গর্বিত যে, এই বিদ্যালয়টি প্রতিনিয়ত তার সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখে চলেছে এবং একটি শিক্ষিত, সভ্য ও দেশপ্রেমিক জাতি গঠনে অবদান রেখে চলেছে।